প্রতি বছর ১লা মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় শ্রমিক দিবস (May Day) বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে। এটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও সম্মান উদযাপনের দিন। এই দিনটি কেবলমাত্র একটি সরকারি ছুটির দিন নয়, বরং এটি শ্রমিকদের শত বছরের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং অর্জনের প্রতীক।
🕰️ শ্রমিক দিবসের ইতিহাস
📍 ১৮৮৬ সালের হে মার্কেট আন্দোলন – মে দিবসের সূচনা
শ্রমিক দিবসের ইতিহাস শুরু হয় ১৮৮৬ সালের ১লা মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে। সেই সময় শ্রমিকরা দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করতেন, কিন্তু এর পরিবর্তে খুব সামান্য মজুরি পেতেন। শ্রমিকরা তখন ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১লা মে ১৮৮৬ সালে প্রায় ৩ লক্ষ শ্রমিক আমেরিকার বিভিন্ন শহরে ধর্মঘট করেন। শিকাগোর হে মার্কেট স্কয়ারে যখন এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলছিল, তখন সেখানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে ও পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক এবং পুলিশ নিহত হন।
এই রক্তাক্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের দাবি বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে এবং পরবর্তীতে ১লা মে দিনটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
🌍 বিশ্বব্যাপী মে দিবস উদযাপন
১৮৮৯ সালে দ্য সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল নামক আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন ফ্রান্সের প্যারিসে এক সম্মেলনে ১লা মে দিনটিকে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে বিশ্বের বহু দেশেই এই দিনটিকে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্মারক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
বর্তমানে প্রায় ৮০টিরও বেশি দেশে এই দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিটি দেশে বিভিন্ন র্যালি, সেমিনার, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি পালন করা হয়।
বাংলাদেশে শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য
বাংলাদেশে ১লা মে একটি সরকারি ছুটির দিন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই এ দেশে মে দিবস গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে। শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং সরকারিভাবে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়।
শিল্পাঞ্চলগুলোতে শ্রমিকদের অংশগ্রহণে র্যালি, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনটি শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে মর্যাদার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
🔎 শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য
১লা মে কেবল একটি স্মারক দিবস নয় — এটি একটি সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক। এই দিনের তাৎপর্য নিচের দিকগুলোতে প্রকাশ পায়:
- ✅ শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন
- ✅ ৮ ঘণ্টা কাজের নীতি প্রতিষ্ঠার স্মারক
- ✅ শ্রমের মূল্যায়ন এবং ন্যায্য মজুরি দাবির প্রতীক
- ✅ শ্রমিক-নিয়োগকর্তা সম্পর্কের মধ্যে সমতা ও সম্মান প্রতিষ্ঠার আহ্বান
- ✅ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ও সংহতির বার্তা
📢 আধুনিক প্রেক্ষাপটে মে দিবসের গুরুত্ব
বর্তমান সময়েও শ্রমিকরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আধুনিক প্রযুক্তি ও অটোমেশনের যুগে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে। অনেক জায়গায় এখনো শ্রমিকরা কাজের ন্যায্য পারিশ্রমিক পান না, নিরাপদ কর্মপরিবেশ থেকে বঞ্চিত হন।
এই প্রেক্ষাপটে মে দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় — শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় বৈশ্বিক ঐক্য, সচেতনতা ও নীতি প্রণয়ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
১লা মে শ্রমিক দিবস হলো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি। এটি শুধু একটি দিবস নয়, বরং সমাজে শ্রমিক শ্রেণির মর্যাদা, ভূমিকা ও ন্যায্যতার প্রতীক। আজকের দিনে আমাদের উচিত— শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, তাদের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য কাজ করা এবং একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসা।
Leave a Reply