ফ্ল্যাট বা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। সঠিক প্রস্তুতি না নিলে ভবিষ্যতে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই, বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে নিচের বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকার।

১. ভাড়াটিয়ার ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করুন

ভাড়াটিয়ার পরিচয়পত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট) এবং তার কর্মস্থলের তথ্য যাচাই করা জরুরি। পুলিশ ভেরিফিকেশন করিয়ে নেওয়া ভালো, বিশেষ করে যদি দীর্ঘমেয়াদী ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা থাকে।

২. স্পষ্ট ও লিখিত চুক্তি করুন

ভাড়া সংক্রান্ত শর্তাবলী লিখিতভাবে উল্লেখ করুন এবং উভয় পক্ষের স্বাক্ষর নিশ্চিত করুন। চুক্তিতে নিচের বিষয়গুলো উল্লেখ করতে পারেন:

  • ভাড়ার পরিমাণ ও পরিশোধের সময়সীমা
  • অগ্রিম ও জামানতের পরিমাণ
  • বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য ইউটিলিটির বিল পরিশোধের দায়িত্ব
  • বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার
  • চুক্তির মেয়াদ ও বাতিলের শর্তাবলী

৩. জামানতের পরিমাণ নির্ধারণ করুন

বেশিরভাগ বাড়িওয়ালা দুই বা তিন মাসের ভাড়া অগ্রিম বা জামানত হিসেবে রাখেন। এতে ভবিষ্যতে কোনো ক্ষতি হলে তা থেকে সমন্বয় করা যায়।

৪. ভাড়া পরিশোধের মাধ্যম নির্ধারণ করুন

ভাড়ার টাকা হাতে নেওয়ার চেয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে গ্রহণ করাই ভালো। এতে লেনদেনের স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং ভবিষ্যতে প্রমাণস্বরূপ ব্যবহার করা যায়।

৫. সম্পত্তির বর্তমান অবস্থা ডকুমেন্ট করুন

বাড়ি বা ফ্ল্যাটের বর্তমান অবস্থার ছবি ও ভিডিও সংরক্ষণ করুন। এতে ভবিষ্যতে কোনো ক্ষতি বা পরিবর্তন হলে সহজেই তা নিরূপণ করা যাবে।

৬. বাড়ি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা

ভাড়াটিয়া প্রবেশের আগে বাড়ির দরজা, জানালা, বৈদ্যুতিক সংযোগ, পানির লাইন ইত্যাদি পরীক্ষা করুন। চুক্তিতে উল্লেখ করুন যে কোন সংস্কার কাজ কার দায়িত্বে থাকবে।

৭. স্থানীয় আইন ও নিয়মনীতি সম্পর্কে জানুন

বাংলাদেশে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত কিছু নির্দিষ্ট আইন ও বিধিনিষেধ রয়েছে। যেমন, ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে ভাড়ার হার নির্ধারণ, বাড়িভাড়ার চুক্তি, এবং উচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা দরকার।

৮. প্রতিবেশী ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করুন

আপনার বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ কেমন, নিরাপত্তার ব্যবস্থা আছে কি না, সিসিটিভি ক্যামেরা বা গার্ড রাখা হয়েছে কি না—এগুলো বিবেচনা করুন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে ভালো ভাড়াটিয়া পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

৯. জরুরি নিয়মাবলী নির্ধারণ করুন

ভাড়াটিয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেওয়া যেতে পারে, যেমন:

  • অতিরিক্ত শব্দ বা পার্টি করা যাবে কি না
  • বাইরের অতিথি থাকা সংক্রান্ত নীতিমালা
  • গৃহপালিত পশু রাখার অনুমতি
  • বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের বিশেষ নিয়মাবলী

১০. দীর্ঘমেয়াদী ভাড়াটিয়া পেতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন

ভাড়াটিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো ভাড়া পরিশোধ নিশ্চিত করতে এবং বাড়ির ভালো ব্যবহারের জন্য সুসম্পর্ক বজায় রাখুন।

ফ্ল্যাট বা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে সঠিক প্রস্তুতি নিলে ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব। ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই, লিখিত চুক্তি, ভাড়ার নিয়মাবলী ও আইন সম্পর্কে জানা থাকলে বাড়ি ভাড়া দেওয়া অনেক সহজ এবং ঝামেলামুক্ত হয়।

About Author

Leave a Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *